মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী, 1940 সালের 28 জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাইক্রোফাইন্যান্স এবং সামাজিক ব্যবসার ধারণা প্রচলনের জন্য পরিচিত। ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক বিশ্বের দরিদ্র জনগণের মধ্যে অর্থায়ন সুবিধা প্রদান করে, যা তাদের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

•বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোটামুটি গত কয়েশ বছরে জন্ম নেওয়া একমাত্র গ্লোবাল সেলিব্রেটি হলেন প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস। তিনি কত বড় মাপের ব্যক্তিত্ব সেটা বোঝার ক্ষমতাও ৯০ ভাগ বাঙ্গালীর নাই। বাঙ্গালীর আরো ৩০/৪০ বছর লাগবে প্রফেসর ইউনুস কোন মাপের মানুষ এটা বুঝতে।

•নোবেল লরিয়েট প্রফেসর ইউনুসের একটা পরিচয়, সব না। পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক তিনটা পুরস্কার হল:

•১। নোবেল।

•২। অ্যামেরিকার প্রসিডেন্সিয়াল এওয়ার্ড।

•৩। মার্কিন কংগ্রেশনাল এওয়ার্ড।

•ইতিহাসে এই তিনটা পুরস্কারই পেয়েছেন এমন মানুষ মাত্র ১২ জন। তার মধ্যে প্রফেসর ইউনুস একজন।

•মেসি হলেন বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তারকার একজন, আক্ষরিক ভাবেই মেসি লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন প্রফেসর ইউনুসের সাথে ছবি তুলতে।

•বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং সর্বোচ্চ সম্মানজনক প্রতিযোগিতা হল আলিম্পক গেমস। ধনী দেশগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে অলিম্পিকের হোস্ট হতে। আলিম্পক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সবচেয়ে সম্মানিত মেহমান হলেন (প্রধান অতিথি) আলিম্পক মশাল বাহক। ২০২০ সালের জাপান আলিম্পকের মশাল বাহক ছিলেন প্রফেসর ইউনুস। ভাবা যায়!?

•২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকের মূল থিম করা হয়েছে প্রফেসর ইউনুসের সামাজিক ব্যবসা তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে। ফ্রেঞ্চদের মত নাকউঁচু জাতির গর্বের অলিম্পিক গেমসের ওয়েবসাইটের টাইটেল পেজে একজন ব্রাউন মুসলমান ড. ইউনুসের ছবি!! ফ্রেঞ্চদের সম্পর্কে যারা টুকটাক খবর রাখেন তারা বুঝবেন ব্যাপারটা কতটা আনইউজুয়াল।

•প্রফেসর ইউনুসের ব্রেইন চাইল্ড ক্ষুদ্র ঋন, সামাজিক ব্যবসা, এবং থ্রি জিরো, এই তিনটি তত্ত্বই গ্লোবাল কমিউনিটি গ্রহন করেছে। এই তিনটা তত্ত্বের তিনটাই যে খুব ভাল, আমি এমনটা মনে করি না। যেকোন সুদ ভিত্তিক পদ্ধতি ভাল হতে পারে না। তবে পয়েন্ট হল সারাবিশ্ব এটাকে গ্রহন করেছে। সামাজিক ব্যবসা এবং থ্রি জিরো— এই দুইটা খুবই জনহিতকর তত্ত্ব, এটা নিয়ে বিতর্ক নেই।

•বর্তমানে জীবিত লিডিং ইন্টালেকচুয়ালের যেকোন তালিকাতে প্রফেসর ইউনুস টপ ৫ এর মধ্যে থাকবেন। অনেকে তাকে ১ নম্বরে রাখবে। একজন বাঙ্গালী মুসলমান দুনিয়ার লিডিং স্কলার, এটা ইতিহাসে কখনো ঘটে নাই। আবার কবে হবে কেউ জানে না।

•প্রফেসর ইউনুসের সাথে কিছু মূর্খ যে আচরণ করে এটা লজ্জাজনক

ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা। তিনি ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্ষুদ্রঋণ ধারণার উদ্ভাবক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, যা দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০০৬ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।

মুহাম্মদ ইউনূসের শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে। তার বাবা হাজী দবিরউল্লাহ ছিলেন একজন সফল সোনার ব্যবসায়ী, আর মা সাফিয়া খাতুন ছিলেন পরোপকারী এবং দরিদ্র মানুষের সহায়তায় নিবেদিত। সাত ভাইবোনের মধ্যে ইউনূস ছিলেন তৃতীয়। ছোটবেলা থেকেই তিনি মায়ের কাছ থেকে মানবসেবার অনুপ্রেরণা পান। চট্টগ্রামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেন। ইউনূসের শৈশব ছিল প্রকৃতি, পরিবার এবং শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত, যা পরবর্তীতে তার জীবন দর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

মুহাম্মদ ইউনূসের শিক্ষাজীবন ছিল অসাধারণ মেধা ও অধ্যবসায়ের উদাহরণ। তিনি চট্টগ্রামের লামাবাজার প্রাইমারি স্কুল থেকে পড়াশোনা শুরু করেন এবং পরে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট সম্পন্ন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি ১৯৬০ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ফুলব্রাইট স্কলারশিপে যুক্তরাষ্ট্রের Vanderbilt University-তে অর্থনীতিতে গবেষণার জন্য যান। ১৯৬৯ সালে তিনি সেখান থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার শিক্ষা ও গবেষণা তাকে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

বাংলাদেশ এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মজীবন শুরু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে। ছাত্র জনতার আন্দলনে তাকে প্রধান উপদেষ্টার জন্য সুপারিস করা হয়। তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময়। গ্রামের দরিদ্র মানুষের দুর্দশা দেখে তিনি তাদের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন। এ থেকেই জন্ম নেয় তার ক্ষুদ্রঋণ ধারণা।

১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে নিজের উদ্যোগে দরিদ্র নারীদের ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে তিনি পরীক্ষা শুরু করেন। তার লক্ষ্য ছিল, ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে থাকা দরিদ্র মানুষদের আর্থিক সহায়তা প্রদান। এই প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ ১৯৮৩ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্রদের বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তার এই মডেল শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে দারিদ্র্য বিমোচনের আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০০৬ সালে তিনি এবং গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি সামাজিক ব্যবসার ধারণা চালু করেন, যা লাভের পরিবর্তে সমাজের সমস্যার সমাধানে নিবেদিত। তার কর্মজীবন মানবিক অর্থনীতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

মুহাম্মদ ইউনূস তার সৃজনশীল উদ্যোগ এবং দারিদ্র্য বিমোচনে অসামান্য অবদানের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার, যা তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে অর্জন করেন। এটি ছিল ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনে তার ভূমিকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

তিনি আরও পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম (২০০৯) এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল (২০১০), যা তাকে বিরল সম্মানের অধিকারী করেছে।

এর পাশাপাশি, তিনি বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০টিরও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যাওয়ার্ড, সিমন بولিভার পুরস্কার, এবং ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার

বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে তিনি অসংখ্য সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। তার কাজের মাধ্যমে তিনি সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক উদ্ভাবনের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

মুহাম্মদ ইউনূস তার চিন্তাধারা, অভিজ্ঞতা এবং দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে তার উদ্ভাবনগুলো নিয়ে বেশ কিছু বই লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো:

১. “Banker to the Poor” (1999)

এই বইটিতে তিনি তার জীবনের গল্প এবং কীভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণা তৈরি ও বাস্তবায়ন করলেন, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। এটি দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের কার্যকারিতা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী পাঠকদের অবহিত করেছে।

২. “Creating a World Without Poverty: Social Business and the Future of Capitalism” (2007)

এই বইয়ে তিনি সামাজিক ব্যবসার ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে ব্যবসাকে লাভের পরিবর্তে সামাজিক সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা যায়।

৩. “Building Social Business: The New Kind of Capitalism That Serves Humanity’s Most Pressing Needs” (2010)

এই বইটি সামাজিক ব্যবসার বিস্তারিত কাঠামো এবং বাস্তব উদাহরণ উপস্থাপন করে। এটি নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়ীদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

৪. “A World of Three Zeros” (2017)

এই বইয়ে তিনি এমন এক ভবিষ্যতের কথা বলেছেন, যেখানে থাকবে “শূন্য দারিদ্র্য,” “শূন্য বেকারত্ব,” এবং “শূন্য কার্বন নিঃসরণ।” এটি তার সামাজিক ও পরিবেশগত লক্ষ্যগুলোর একটি রূপরেখা।

এই বইগুলো তাকে বৈশ্বিক চিন্তাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং মানবিক উন্নয়নে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে দিয়েছে।

মুহাম্মদ ইউনূসের সোশ্যাল বিজনেস (Social Business) ধারণা বিশ্বজুড়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের এক নতুন পথ উন্মোচন করেছে। এটি একটি অনন্য ব্যবসায়িক মডেল, যার মূল লক্ষ্য লাভ অর্জন নয়, বরং সামাজিক সমস্যার সমাধান করা। তিনি এই ধারণাটি দারিদ্র্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবেশগত সমস্যার মোকাবিলায় কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

সোশ্যাল বিজনেসের মূল বৈশিষ্ট্য:
  1. লাভ নয়, সমস্যা সমাধান: ব্যবসার উদ্দেশ্য হলো সামাজিক সমস্যার সমাধান, যেমন দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, বা পরিবেশ রক্ষা।
  2. পুনঃবিনিয়োগ: লাভের পুরো অংশ পুনরায় ব্যবসার উদ্দেশ্য পূরণে বিনিয়োগ করা হয়; এটি বিনিয়োগকারীদের ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য নয়।
  3. স্বনির্ভরতা: এটি দান বা অনুদান-নির্ভর নয়; ব্যবসাটি নিজের আয়ে টিকে থাকে।
  4. উদ্ভাবনী সমাধান: সামাজিক সমস্যা সমাধানে নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তির প্রয়োগ।
সফল উদাহরণ:
  1. গ্রামীণ ডানোন ফুডস: পুষ্টি ঘাটতি মোকাবিলায় সাশ্রয়ী মূল্যে পুষ্টিকর দই সরবরাহ।
  2. গ্রামীণ-ভেওলিয়া ওয়াটার: সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ।
  3. গ্রামীণ ক্যালেডোনিয়া টেক্সটাইলস: টেক্সটাইল শিল্পে টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
সোশ্যাল বিজনেসের ভূমিকা:
  • এটি একটি বিকল্প অর্থনৈতিক মডেল, যা দারিদ্র্য ও অসাম্যের সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন করে, বিশেষত নারী উদ্যোক্তাদের।
  • যুবসমাজকে উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করে।

মুহাম্মদ ইউনূস সোশ্যাল বিজনেসকে ভবিষ্যতের অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য মনে করেন এবং এটি বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।

“A World of Three Zeros: The New Economics of Zero Poverty, Zero Unemployment, and Zero Net Carbon Emissions” মুহাম্মদ ইউনূসের একটি প্রভাবশালী বই, যেখানে তিনি এমন একটি পৃথিবীর কল্পনা করেছেন যেখানে তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জের সমাধান করা সম্ভব। এই তিনটি লক্ষ্য হলো: শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণ।

বইটিতে ইউনূস দেখিয়েছেন, কিভাবে প্রচলিত পুঁজিবাদ শুধু মুনাফার জন্য কাজ করে এবং সামাজিক সমস্যাগুলোর প্রতি উদাসীন থাকে। তিনি সোশ্যাল বিজনেসের মাধ্যমে একটি নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ধারণা দেন, যেখানে ব্যবসা মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।

তিনি উদাহরণ দিয়েছেন, কিভাবে ক্ষুদ্রঋণ, গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল এবং সোশ্যাল বিজনেস দরিদ্রদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এনে দিতে পারে। ইউনূস ব্যাখ্যা করেছেন, তরুণ প্রজন্ম ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। একই সঙ্গে, টেকসই উন্নয়ন এবং সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার দিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে একটি পরিবেশবান্ধব পৃথিবী গড়ে তোলা যায়।

এই বইটি শুধু সমস্যা নয়, এর সমাধানও উপস্থাপন করে। এটি একটি অনুপ্রেরণাদায়ক রূপরেখা, যা ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নের জন্য সমাজ, ব্যবসা, এবং নীতিনির্ধারকদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। “3 Zero” বইটি সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি কার্যকরী পথনির্দেশনা।

মুহাম্মদ ইউনূসকে এই শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা যায়, কারণ তিনি দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি নতুন পথ দেখিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক এবং ক্ষুদ্রঋণ মডেল বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেখানে দরিদ্র মানুষকে উপেক্ষা করে, সেখানে তাদের সহায়তা করা সম্ভব এবং এটি লাভজনকও হতে পারে।

তার উদ্ভাবিত সোশ্যাল বিজনেস মডেল অর্থনীতির জন্য একটি বিপ্লবী ধারণা। এটি দেখিয়েছে, ব্যবসা শুধু মুনাফার জন্য নয়, বরং সামাজিক সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হতে পারে। তার লক্ষ্য তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ—দারিদ্র্য, বেকারত্ব, এবং কার্বন নিঃসরণ দূরীকরণ। তার ধারণাগুলো বর্তমানে ৫০টিরও বেশি দেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

তিনি শুধু একটি মডেল প্রস্তাব করেননি; বরং এটি বাস্তবে কার্যকর করে দেখিয়েছেন, যা তাকে একটি বৈশ্বিক অনুপ্রেরণায় পরিণত করেছে। ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া তার অর্জনের শিখর নয়; এটি তার কাজের গভীর প্রভাবের একটি স্বীকৃতি।

মুহাম্মদ ইউনূস একটি নতুন অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রবর্তক, যা মানুষ এবং পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেয়। তার কাজ শুধুমাত্র এই শতাব্দীতে নয়, ভবিষ্যতেও মানব উন্নয়নে প্রভাব ফেলবে। এজন্যই তিনি বর্তমান শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন।

Leave a Comment