১৯৭১ এটা নাকি ভারতের স্বাধীনতা ?
১৯৭১ এটা নাকি ভারতের স্বাধীনতা ? ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ আমাদের বিজয় ভারতের নয়।পাশের দেশের রাজা নির্লজ্জ বেহায়ার মত বাংলাদেশ এর স্বাধীনতাকে ভারতের স্বাধীনতা বলে বই পুস্তকে লিখে খান্ত হই নাই ভারত ।আজ নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে স্পষ্ট করে নির্লজ্জ বেহায়ার মত এটি ভারতের স্বাধীনতা বলে পোস্ট করেছেন। আজ ইন্টানেটের দুনিয়া, সব কিছুই উন্মুক্ত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ভারতীয় সৈনিকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে মাত্র ৭ জনকে সম্মাননা প্রদান করেছিলেন খুনী হাসিনা। ভারতের কোন authentic documentary sources নাই যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সঠিক কতো জন মানুষ মারা গেছে। গায়ের জোরে কোন documentary ছাডাই ভারত বলে তাদের ১৫০০ মানুষ মারা গেছে ১৯৭১ সালে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ১০ হাজার ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বৃত্তি প্রদানসহ নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদানেরও ঘোষণা দেন মোদি।আর মজার ব্যপার অর্থ দাতা খুনি হাসিনা।
*********************
আমি আসিফ নজরুল স্যারের অনেক বিষয় এর সাথে একমত নই। আজ অনেক ভালো লাগলো উনি head to head মোদির পোস্ট এর জবাব দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো স্যার কি নিজে থেকে এমন head to head ভারতের বিরুদ্ধে স্ট্যান্ড নিলেন না আসিফ , নাহিদরা বাধ্য করলো Sir ??
***********************
নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি ফেসবুক পোস্ট সহ সব ডকুমেন্ট আমি কমেন্টে দিলাম।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা: আমাদের গৌরব, কারো অনুগ্রহ নয়
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ এবং দুই লাখেরও বেশি নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা আমাদের জাতিসত্তার মূল পরিচয়। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু বিতর্ক এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার অপপ্রয়াস লক্ষ্য করা যায়, যা দুঃখজনক ও ক্ষুব্ধ করার মতো।
সম্প্রতি, ভারতের রাজনৈতিক মহল থেকে মাঝে মাঝেই এমন বক্তব্য উঠে আসে যা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্রকে আড়াল করার চেষ্টা করে। বিশেষ করে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি পোস্ট, যেখানে তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের বিজয় হিসেবে তুলে ধরেছেন, তা অনেক বাংলাদেশির কাছে অপমানজনক ও বিভ্রান্তিকর বলে মনে হয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছিল, তবে এটি ছিল একান্তই আমাদের নিজের স্বাধীনতা সংগ্রাম। এটি ভারতের স্বাধীনতার অংশ নয়, বরং তাদের সমর্থন ছিল কৌশলগত ও মানবিক।
ভারতীয় সেনাবাহিনী আমাদের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল—এটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের অনেক সৈনিকও প্রাণ দিয়েছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে, এটি কখনোই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল কেন্দ্রবিন্দু নয়। বাংলাদেশের মানুষই এই যুদ্ধের আসল নায়ক। বাঙালিরা ছিল এই সংগ্রামের মূল চালিকা শক্তি, যারা পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করতে পিছপা হয়নি।
অপরদিকে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা নিয়ে অনেক বেশি প্রশংসা করে থাকেন। ২০১৫ সালে ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদানের আয়োজন এবং বিভিন্ন সময় ভারতকে আর্থিক সুবিধা প্রদান করার ঘটনাগুলোকে অনেকেই সমালোচনার চোখে দেখেন। বিশেষত যখন দেখা যায়, ভারতের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কোনো ডকুমেন্টারি বা প্রমাণ ছাড়া দাবি করা হয় যে তাদের ১,৫০০ জন সেনা শহীদ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে। এ ধরনের দাবি অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়, কারণ এখন পর্যন্ত ভারতের তরফ থেকে মুক্তিযুদ্ধের নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়নি।
বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানে। এটি কোনো দয়া বা অনুগ্রহের ফসল নয়। এটি আমাদের নিজস্ব রক্ত, ঘাম এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমেই অর্জিত। ১৯৭১ সালে ভারতের ভূমিকাকে স্বীকার করা হলেও, তা আমাদের স্বাধীনতার মূল চালিকাশক্তি নয়। বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতার জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, তা ভারতের কোনো রাজনৈতিক প্রচারণার দ্বারা আড়াল করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার যে কোনো প্রয়াসই আমাদের জাতীয় পরিচয়ের ওপর আঘাত। ভারতের উচিত, তাদের সহযোগিতাকে স্বাধীনতার যৌথ অর্জন হিসেবে দেখানোর পরিবর্তে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্জনকে যথাযথ সম্মান জানানো। একই সঙ্গে, বাংলাদেশের নেতৃত্বেরও দায়িত্ব রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে রক্ষা করা এবং দেশের জনগণের আত্মত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন করা।
১৯৭১ সাল আমাদের জন্য গর্বের অধ্যায় এবং এই ইতিহাস কখনো কারো অপব্যাখ্যা বা অপপ্রচার দ্বারা ম্লান হতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ তার জাতির জন্য স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং এটি আমাদের জাতির অহংকার।
ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত ভাগাভাগি ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের কারণে ভারত কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাছ থেকে একতরফা সুবিধা পেয়ে থাকে। এই সুবিধাগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং কৌশলগত গুরুত্বের কারণে ভারত পেয়েছে। নিচে এ ধরনের ২০টি সুবিধার একটি তালিকা দেওয়া হলো:
১. ট্রানজিট সুবিধা:
ভারত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহন ও সংযোগ স্থাপন করতে পারে। এ কারণে ভারতের পরিবহন খরচ ও সময় অনেক কমে যায়।
২. নদীপথ ব্যবহার:
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথ ভারত ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে, বিশেষত ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও গঙ্গা নদী সংযোগ।
৩. চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার:
ভারতের পণ্য পরিবহনের জন্য এই দুই গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
৪. বিদ্যুৎ আমদানি:
ভারত বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত থেকে বেশি মূল্যে বিদ্যুৎ আমদানি করে।
৫. সীমান্ত হাট:
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে স্থাপিত হাটগুলো মূলত ভারতের অর্থনৈতিক সুবিধা বৃদ্ধি করে।
৬. তিস্তা নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ:
তিস্তা নদীর পানি একতরফাভাবে ব্যবহার করে ভারত, যা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
৭. সীমান্তে গরু পাচার:
সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু প্রবেশ করে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৮. বাণিজ্য ঘাটতি:
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। বাংলাদেশ ভারত থেকে বেশি আমদানি করে, কিন্তু রপ্তানি তুলনামূলক কম।
৯. ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব:
ভারত বহু বছর বাংলাদেশ থেকে ছিটমহলের সুবিধা ভোগ করেছে এবং বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ করেছে।
১০. অভিন্ন নদীর পানি ব্যবহার:
৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ভারত একতরফাভাবে সুবিধা নেয়।
১১. সীমান্ত হত্যা:
বিএসএফ-এর সঙ্গে সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশের জনগণের জন্য বড় একটি সমস্যা।
১২. স্থলবন্দর নিয়ন্ত্রণ:
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি স্থলবন্দর ভারতের পণ্য পরিবহনে ব্যবহার হয়, যা ভারতের জন্য লাভজনক।
১৩. রেলপথ সংযোগ:
ভারত বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনে সুবিধা নেয়।
১৪. ফারাক্কা বাঁধ:
ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা নদীতে পানির প্রবাহ কমে বাংলাদেশের পরিবেশ ও কৃষিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
১৫. অবৈধ ট্রলার প্রবেশ:
ভারতের মৎস্যজীবীরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
১৬. ওষুধ শিল্পের বাজার:
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর প্রভাব অনেক বেশি, যা স্থানীয় শিল্পকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।
১৭. অভিবাসী শ্রমিক সুবিধা:
বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে কাজ করে, যা সস্তা শ্রমের সুবিধা দেয় ভারতকে।
১৮. সংস্কৃতির প্রভাব:
ভারতীয় চলচ্চিত্র ও টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত হয়, যা বাংলাদেশের স্থানীয় সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে।
১৯. বাণিজ্য চুক্তিতে শুল্ক সুবিধা:
ভারত অনেক ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলেও, বাংলাদেশ তেমন সুবিধা পায় না।
২০. অভিন্ন নদীতে বাঁধ নির্মাণ:
অভিন্ন নদীতে একতরফা বাঁধ নির্মাণ করে ভারত, যা বাংলাদেশের জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
লেখক ও শিক্ষক
মেহেদী হাসান