বিশ্ব শিক্ষক দিবস

জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমুল পর্যন্ত শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনেক অনুষ্ঠানের ছবি দেখলাম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মূল মঞ্চে শিক্ষকের খুব একটা ঠায় হয় নি।

হায় রে শিক্ষক দিবস!

পোস্ট করেছেন জনাব আব্দুল হাই

Assistant professor, Botany at Vashantec Govt College Dhaka.

আমি একজন মাধ্যমিকের শিক্ষক ।।তার পোস্টের বিবতিতে আমার মন্তব্যঃ

ধন্যবাদ স্যার সত্য বিষয়টি এত স্পষ্ট ভাবে উপস্থাপন করার জন্য। MPO প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আরো করুন স্যার ( হোক সেটা প্রাইমারি, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক)

ক্ষেএ বিষেষে মেম্বার /চেয়ারম্যান / MP হয় সভাপতি। তার পরের দৃশ্য খুব করুন।।তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের রাজা আর শিক্ষকরা প্রজার মত জি হজুর জি হজুর করি।এই হল আমাদের শিক্ষক।। য়ার একাডেমিক Background ঠিক নাই তিনিই লেকচার দেন ক্যমতে পড়তে হয়,চাকরি পাইতে হয়।।দেশের বাইরে পি এইচ ডি করতে য়েতে হয়।।কত কতা রে বাবা।। দর্শক সারিতে বসা এক জন শিক্ষক এগুলো হজম করছে।।আর কত স্যার।। এবার শিক্ষক দিবসটাও এক সাথে পালনের নানা প্রতিবন্ধকতা।।দিন শেষে আমরা শিক্ষক সমাজ শিক্ষা ক্যডারদের দিকেই চেয়ে থাকি।।মনে প্রানে বিশ্বাস করি আপনারই আমাদের আলোক বর্তিকা স্যার।।

“শিক্ষার দুষ্টচক্র”

দারিদ্রের দুষ্ট চক্র কথাটার সাথে তো নিশ্চই সবাই পরিচিত। শিক্ষার দুষ্ট চক্রটাও ঠিক তেমনি। এমন পরিস্থিতি তৈরী করতে হবে যেন, ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীটি শিক্ষক হবার উৎসাহ না পায়, তার পরিবর্তে ক্লাসের সবচেয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীটি শিক্ষক হতে বাধ্য হয়। ঐ দুর্বল শিক্ষার্থী দুর্বল শিক্ষক হয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রজন্ম তৈরী করবে, সেখান থেকে আবার সবচেয়ে দুর্বলটি হবে শিক্ষক…. এভাবেই ধীরে ধীরে একটি জাতি মূর্খ জাতিতে পরিনত হবে। এটাই হচ্ছে- শিক্ষার দুষ্ট চক্র।

শুরুর শুরুটা আইয়ুবের পাকিস্তান আমলে হলেও এই পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই শিক্ষার মান কমতে শুরু করেছে। বৃটিশ আমলে সরকারী কলেজের লেকচারারের বেতন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারারের চেয়ে এক গ্রেড উপরে। এই কারনে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর শিক্ষকতা করার পর সরকারী কলেজের শিক্ষক হবার জন্য চেষ্টা করতেন।

এমনকি পাকিস্তান আমলেও শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদটি ছিল সচিব মর্যাদার, নাম ছিল ‘ডিপিআই’; বৃটিশ আমলের ‘ডিপিআই বাহাদুর’ সম্বোধনটি তখনো প্রচলিত ছিল। ঢাকা থেকে ডিপিআই সাহেব রাজশাহী গেলে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার (যুগ্ম-সচিব মর্যাদার) প্রটোকল অনুযায়ী তাঁকে বিমান বন্দরে রিসিভ করতে যেতেন। বৃটিশ আমলে লেকচারারের বেতন মেজিট্রেটের এক গ্রেড উপরে ছিল। আইয়ুব আমলে লেকচারারদের বেতন এবং মেজিস্ট্রেটদের বেতন একই স্কেলে থাকলেও লেকচারারদের একটা অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দিয়ে চাকরীতে ঢোকানো হতো, আর ফার্স্টক্লাস থাকলে দু’টো। আইয়ুব খান সিএসপি নামের আমলাতন্ত্র চালু করে মেধাবীদেরকে শিক্ষক হবার পরিবর্তে আমলা হবার পথে আকর্ষন করার ব্যবস্থা করেছিল।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সেই আমলাতন্ত্র জেঁকে বসলো শিক্ষার উপরে। শিক্ষকদের পদে পদে অপমান করা শুরু হলো। ধীরে ধীর গত চল্লিশ বছরে অবস্থাটা এমন দাঁড়ালো- যে ডিপিআই বাহাদুরকে একদা জয়েন্ট সেক্রেটারী গিয়ে প্রটোকল দিত, এখন মাউশির মহাপরিচালককে সিনিয়র এসিস্টেন্ট সেক্রেটারীরাও ধমক দিয়ে আদেশ/নির্দেশ দেয়। কার কি বলার আছে ?

MPO একজন মাধমিক লেভেলের শিক্ষকের বেতন ১১ তম গ্রেট হলেও উনি বেতন পান মাত্র ১২,৫০০ টাকা

সাম্প্রতিক বেতন স্কেলের কারিশমা দেখুন- HSC পাশ কম্পিউটার অপারেটর এর অবস্থান ১৩তম গ্রেডে, আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করা একজন primary শিক্ষকের অবস্থান তার চেয়ে দুই গ্রেড নীচে ১৫তম গ্রেডে। যারা জানেন না ?? অবেক হচ্ছেন তাই না ?? আবার MPO একজন মাধমিক লেভেলের শিক্ষকের বেতন ১১ তম গ্রেট হলেও উনি বেতন পান মাত্র ১২,৫০০ টাকা ??জি আপনি ঠিকই শুনেছেন ১২৫০০ টাকা । এঁর পরেও বলবেন শিক্ষার মেরুদণ্ড ঠিক আছে ?

কার ঠেকা পরেছে HSC পাশ করার পর আরো 10/12 বছর পড়ালেখা করে ১৫তম গ্রেডে শিক্ষক হবার? তারচেয়ে HSC পাশ করার পর ৬ মাসের কম্পিউটার কোর্স শেষে ১৩তম গ্রেডে ঐ শিক্ষকের বস হিসেবে চাকরী নেয়াটাই কী বুদ্ধিমানের কাজ নয়?

এলারার মেম্বার ,চেয়ারম্যান, এম পি দের কথা বললে তো চাকরি থাকবে না ?উনার আমার আপনার প্রথিস্থানের বস মানে সভাপতি । আপনার কাজ হবে জি হুজুর ,জি হুজুর করা । আর কি করার ক্ষমতা আছে আমাদের ??

মেহেদী হাসান

শিক্ষক এবং লেখক।

Leave a Comment